জরুরী কিছু কথা।
(সবাই পড়বেন)
পড়ে বুঝে শুনে কমেন্ট জ্ঞানীরাই করেন!
ডাক্তারদের মাঝে যেমন বিভিন্ন ক্যাটাগরি রয়েছে। কেউ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, কেউ সার্জন, কেউ স্পেশালিট, কেউ অন্যকিছু।
তেমনি আলেমদের মাঝেও বিভিন্ন ক্যাটাগরি রয়েছে। কেউ শুধু মাওলানা, কেউ মুফতী,কেউ মুহাদ্দিস, কেউ মুফাসসির,কেউ ক্বারী।
মেডিসিন বিশেষজ্ঞ কোন ডাক্তার যদি সার্জনের কাজ শুরু করে দেয় রোগীর কি অবস্থা হবে? ডেন্টাল স্পেশালিস্ট যদি হার্ট সার্জারী করা শুরু করে রোগী কি বাঁচবে?
ঠিক সেইম অবস্থা হচ্ছে বর্তমানে, এক বিষয়ের স্পেশালিস্ট আলেম অন্যবিষয়ে সমাধান দিচ্ছেন। মুফাসসির মুফতীর কাজ করা শুরু করছেন। ক্বারী মুহাদ্দিসের কাজ করা শুরু করেছেন।
ফলে কী হল? সারাদেশে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হল। মানুষ নানা দলে বিভক্ত হল। একবক্তা আরেক বক্তাকে জুতা দেখাল। এক ভক্ত আরেক ভক্তের চৌদ্দগুষ্ঠী উদ্ধার করল।
আসলে মূল সমস্যাটা কোথায়? ফিকহী মতবিরোধ তো আগেও ছিল কিন্তু এই অবস্থা কেন সৃষ্টি হল। তার কারণ বুঝতে চারজন বিখ্যাত ব্যক্তির উপমা তুলে ধরলাম।
১. মাওলানা তারিক জামিল হাফিযাহুল্লাহ. বর্তমান সময়ে সারাবিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টিকারী বিখ্যাত আলেম। তার তুলনা তিনি নিজেই। তবে তিনি হচ্ছেন দাওয়াহ স্পেশালিস্ট। তাই মাসআলা বলা, ফতওয়া দেয়া এসব তিনি কৌশলে এড়িয়ে চলেন। এজন্য সারাবিশ্বে তাকে নিয়ে কোন বিতর্ক নেই।। তার কোন হেটার্স নেই। কারণ তিনি তার গন্ডির বাহিরে গিয়ে কখনোই আলোচনা করেন না।
২. ড. জাকির নায়েক হাফি. সারাবিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টিকারী আরেক বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব। তিনি তুলনামূলক ধর্মত্বত্ত্বে স্পেশালিষ্ট। এ বিষয়ে তিনি সেরাদের অন্যতম। এটা সব আলেমগণই স্বীকার করেন। কিন্তু তাকে নিয়ে সারা বিশ্বে বিতর্ক রয়েছে। বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞ আলেমগণ তার গবেষণা মাঝে বহু ভুলত্রুটি খুঁজে পেয়েছেন। কেন? হিংসায়? নাহ,
তিনি যখন ধর্মতত্ত্বের লেকচার দিতেন,ডিবেট করে বিভিন্ন অমুসলিম পণ্ডিতদের হারিয়ে দিতেন তখন সব দেশের বিজ্ঞ আলেমগণ তাকে সাপোর্ট করত। কিন্তু তিনি যখন নিজের গন্ডির বাহিরে গিয়ে ফিকাহ ও ফতওয়া নিয়ে লেকচার দিতে শুরু করেছেন। তখন আলেমগন তার সমালোচনা শুরু করলেন, তার ভুলগুলো তুলে ধরলেন। কেননা তিনি উক্ত বিষয়ে স্পেশালিস্ট ছিলেন না।
৩. মাওলানা দেলাওয়ার হুসাইন সাইদী হাফি. বাংলাদেশের ইতিহাসে বিখ্যাত একজন মুফাসসীর। তিনি ছিলেন তাফসীর স্পেশালিস্ট। এজন্য তিনিও মাসআলা বলা, ফতওয়া দেয়া এসব কৌশলে এড়িয়ে চলতেন। তাই এখনো বাংলার যমীনে তিনি সর্বজনপ্রিয়। মুফাসসীর হিসেবে তাকে নিয়ে কোন বিতর্ক নেই। কারণ তিনি নিজের গন্ডির বাহিরে গিয়ে কিছু বলতেন না।
৪. মাওলানা মিজানুর রহমান আজহারী হাফি. সময়ের আরেক আলোচিত নাম। আল্লাহ তাকে চমৎকার প্রেজেন্টেশনের গুণ দান করেছেন। তিনিও তাফসীর স্পেশালিস্ট। মিশরের জামিয়া আল আজহার থেকে এ ডিগ্রি নিয়েছেন। কিন্তু তিনি ক্ষণে ক্ষণে বিতর্কিত হচ্ছেন। বিজ্ঞ আলেমগণ তার আলোচনায় বহু ভুল খুঁজে পাচ্ছেন। কেন? হিংসায়? ব্যবসা লাটে উঠেছে বলে? নাহ। তিনি যখন নিজের গন্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ থেকে আলোচনা করতেন। বিজ্ঞ আলেমগণ তাকে আল্লাহর বিশেষ নেয়ামত মনে করতেন। কিন্তু তিনি যখন নিজের গন্ডি ভুলে ফিকাহ ও ফতওয়া বিষয়েও সমাধান দেওয়া শুরু করলেন তখনই বিজ্ঞ আলেমগণ তার সমালোচনা শুরু করলেন। তার ভুলগুলো তুলে ধরলেন। কেননা তিনি উক্ত বিষয়ে স্পেশালিস্ট নন।
আশা করি ক্লিয়ার বুঝতে পেরেছেন মূল সমস্যাটা কোথায়।
সুতরাং আপনার যখন মেডিসিন (দাওয়াহ/দ্বীনি অনুপ্রেরণা ) এর প্রয়োজন হবে অভিজ্ঞ মেডিসিন স্পেশালিস্ট (মুফাসসীর) এর কাছে যাবেন। তার প্রেসক্রিপশন (ওয়াজ) মোতাবেক আমল করবেন।
আর যখন অপারেশন (ফতওয়া/হারাম- হালাল,জায়েজ - নাজায়েজ প্রশ্নের উত্তর ) এর প্রয়োজন হবে তখন অভিজ্ঞ সার্জন ( মুফতী) এর কাছে যাবেন। তার সার্জারী (ফতওয়া ) মতো আমল করবেন। এটাই সুস্থ বিবেকের দাবী।
তারপরও কেউ অন্ধভক্তি দেখালে সেটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। আমার কিছু বলার নেই। কেননা, কুরআনে এ ধরণের ব্যক্তিকেই সালাম বলে ইগনোর করতে বলা হয়েছে।
(সংগৃহীত )